মুখবন্ধ
বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। ব-দ্বীপ আকৃতি ও উপকুলবর্তী বর্হিগঠন হওয়ায় বাংলাদেশে দুর্যোগের প্রবনতা বেশী। আন্তর্জাতিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ প্রকাশিত Global Climate Risk Index অনুযায়ী জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত কারণে ক্ষতির বিচারে ১০ টি ক্ষতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এদেশের দুর্যোগের ইতিহাস উল্লেখ করার মত। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২৭-অক্টোবর, ১-নভেম্বর, ১৮৭৬ সালে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালী, নোয়াখালি ও চট্টগ্রাম জেলার ৪ লক্ষ প্রাণির জীবন ধ্বংস এবং অপরিমেয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। অক্টোবর ১৮৯৭ সালে প্রচন্ড হারিকেন ও জলোচ্ছ্বাস চট্টগ্রাম ও কুতুবদিয়া দ্বীপের ১ লক্ষ ৭৫ হাজার প্রাণির জীবন ধ্বংস হয়েছে। এপ্রিল, ১৯১১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে টেকনাফে ১ লক্ষ ২০ হাজার লোক মারা যায়, নভেম্বর, ১৯৭০ সালে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস খুলনা-চট্টগ্রাম উকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এতে প্রায় ৩ লক্ষ প্রাণের মৃত্যু ঘটে এবং অগণিত গবাদি পশু মারা যায় সেইসাথে বিশাল এলাকার শস্য ও সম্পদ নষ্ট হয়। এপ্রিল, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পটুয়াখালী-কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এতে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার লোক, ৭০ হাজার গবাদি পশু মারা যায় এবং প্রচুর শস্য নষ্ট হয়। এছাড়াও নভেম্বর, ২০০৭ সালের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় (সিডর) আঘাতে বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বাগেরহাটে মারা যায় ৩৪০৬ জন, নিখোঁজ হয় ১০০৩ জন, এবং প্রায় ৫৫ হাজার লোক আহত হয়। ২০০৯ এর প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় (আইলা) কারণে ৮ হাজার কোটি টাকার ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয় এবং ২০১৩ এর প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় (মহাসেন ) কারণেও ১৫ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতির সম্মুখিন হয়, প্রায় ৪৫০০০ ঘর-বাড়ী সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়।
উপরের ইতিহাসে দেখা যায উপকুলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম জেলায়প্রতি বছরই কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, নদীভাঙ্গন, পাহাড়ী ঢল/ধ্বসইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন বড় বড় যে সকল দুর্যোগ বাংলাদেশকে আঘাত করেছে তার প্রতিটিই এই জেলাকেও আক্রান্ত করেযানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধণ করেছে।ফলেএতদঅঞ্চল তো বটেই তথা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে একটি ঋনাত্নক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার এই সকল দুর্যোগ বেশ সফলতা ও দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করে আসছে যা বিশ্ববাশির কাছে প্রশংসিত ও অনুকরনীয় হয়েছে।
প্রতি বছর দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ক্ষতির সম্মুখিন হয় সেটা হ্রাস করতে পারলে একটি উন্নত রাস্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে। এই লক্ষকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়, কম্প্রিহেন্সিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) এর আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাসের উদ্দেশ্যে সকলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরীর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় এব্যাপারে যে ব্যাপক উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার দাবিদার সেই সাথে উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে ইউকেএইড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, নওরোজিয়ান এ্যাম্বেসি, সুইডিস এ্যাম্বেসি, অস্ট্রেলিয়ান এইড ও ইউএনডিপি এই পরিকল্পনা তৈরীতে যে সহযোগিতা প্রদান করছে সেটাও সমভাবে প্রশংসার দাবিদার। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমন্বয়কারী সংস্থা ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, এডুকেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট (ড্রীম), বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার বিভিন্ন কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সন্নিবেশিত করে যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরী করেছে যা ভবিষ্যতে দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাসে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে সে জন্য তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্য, স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও জনগন যারা এই কার্যক্রমে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি পরিকল্পনা তৈরীতে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করেছেন।
মেজবাহ উদ্দিন
জেলা প্রশাসক
ও
সভাপতি
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি
চট্টগ্রাম জেলা
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস