প্রিয় সুধী,
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, দূরদর্শী ও সম্মোহনী নেতৃত্বে দেশের আপামর জনসাধারণ উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। নয় মাসব্যাপী এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করে এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশকে স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা মাফিক বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করেন। কিন্তু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার যে দায়িত্ব জাতির পিতা নিয়েছিলেন তা মোটেই সহজ ছিল না কেননা তার পেছনে ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ২৪ বছরের দুঃশাসন, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের ইতিহাস আর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দুইশত বছরের গোলামীর জিঞ্জির। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনায় কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যদের বুলেটের নির্মম আঘাতে জাতির আলোকবর্তিকা এই মহান নেতা সপরিবারে শহীদ হন। সাথে সাথে স্থবির হয়ে পরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার এক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবতায় রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের সকল প্রান্তের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছে । দেশের সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে তৈরি জাতীয় তথ্য বাতায়ন ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে স্বীকৃত চট্টগ্রাম ও সেই ওয়েবপোর্টালের অংশ।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলার স্থানীয় পর্যায়ের কার্যাবলির সাথে সরকারের সংযোগ স্থাপিত হয়। রাজস্ব প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি, জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, জেলখানা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ট্রেজারি ও স্ট্যাম্প, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী ভূমিকা গ্রহণের ফলে অধিকাংশ সেবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ জনগণ জেলা প্রশাসনের কার্যাবলি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পাশাপাশি জেলার সকল তথ্য, অনলাইন পদ্ধতিতে বিভিন্ন সেবার আবেদন পদ্ধতি, ই-সার্ভিস গ্রহণ, জেলার পর্যটন কেন্দ্র, জেলার ঐতিহাসিক স্থান ও ব্যক্তি, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন। ওয়েবসাইট থেকে জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগাযোগ নম্বর, ই-মেইল সংগ্রহ করে কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণের পাশাপাশি যে কোন অভিযোগ, পরামর্শ জানাতে পারবেন, যা জেলা প্রশাসনের সেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওয়েবসাইটে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ করা হয়। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, শুদ্ধাচার কৌশল, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা, সিটিজেন চার্টার জেলা প্রশাসনের ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হয়, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ উপকৃত হবেন। আমি আশা করি, এই ওয়েব পোর্টালটি জনগণের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করতে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তেমনি তাদের সেবাপ্রাপ্তি হবে সহজতর ও স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ।
পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা, বন-বনানীর কারণে চট্টগ্রামের মতো ভৌগোলিক বৈচিত্র বাংলাদেশের আর কোন জেলার নেই। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন, অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা যাত্রামোহন সেন, বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরী, এম এ আজিজ, এম এ হান্নান, কমরেড মোজাফফর আহমেদ, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কবি শাহ মোহাম্মদ ছগির, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, দৌলত উজির বাহরাম খান, আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর, কবি আবদুল হাকিম, নবীনচন্দ্র সেন, ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা, সাহিত্যিক আবুল ফজল, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, শিক্ষাবিদ আহমদ শরীফ, কথা সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ প্রমুখের এই চট্টগ্রামকে সারাদেশ তথা বিশ্বের বুকে তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম এই ওয়েব পোর্টাল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে এই ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জেলা প্রশাসন তথা চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে আপনাদের যে কোন মূল্যবান পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে। জেলার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।
শুভেচ্ছান্তে,
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
চট্টগ্রাম
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস